Wednesday, October 15, 2008

বাল

ভারতের পশ্চিমবঙ্গের এর নিভৃত গ্রাম, সেই গ্রামেরই এক সচ্ছল গৃহস্থ হারান ঘোষ। হারানের সংসারে আছে তার বৌ পদ্ম(চুলে পাক ধরেছে), মেয়ে বাসন্তী। বড় মেয়ে অঞ্জলীর বিয়ে হয়েছে দুই গ্রাম পরে। বাসন্তীর বিয়ে হয়েছে গত ফাল্গুনে, ছেলে বড় ভালো, দিল্লীতে কাজ করে। ছোট কাজ করে তাই ছুটি ছাটা তেমন নেই। ফাল্গুনে বিয়ের পর বৈশাখে বেড়িয়ে গেল, আর এখন আশ্বিন। পুজোর ছুটিতে এসে মেয়েটাকে নিয়ে যাবে।

ট্রেনটা ছুটে চলেছে। কার্তিক ঘুমিয়ে ছিলো, খোলা জ়ানলা দিয়ে জল এসে গায়ে লাগাতে জেগে উঠেছে। পুজোর ছুটির ট্রেন যাত্রি বোঝাই। সামনের জানলা দিয়ে, সামনের সীটের মোটা মহিলাটা থালা ধুচ্ছে। তার জলই লেগেছে বোধহয়। তবে তার মেজাজ আজ বড় ভালো, কতদিন পর বাসন্তীকে দেখবে আজ! হাওড়া নেমে বাসে পাঁচ ঘন্টার যাত্রা, এর পর হাঁটা পথে তিন কিলোমিটার পর বাসন্তীদের বাড়ী। দিল্লিতে চাকরি করে, শ্বশুর বাড়ীতে তার আলাদা খাতির। অধিকাংশ কথা হিন্দীতেই বলবে, একটা আলাদা ভাবসাব আছে না।

পদ্ম উঠোন ঝাড়ু দিচ্ছিলেন, এই সময় গলা খাকারী শুনে এগিয়ে দেখে ছোট জামাই কার্তিক এসেছে। যথারী্তি প্রনাম পর্ব শেষ হওয়ার পর কার্তিক জানতে চাইলো, “আম্মীজী, আপকো তবিয়ত ঠিকতো হ্যায় না? আব্বুজী কাহা হ্যায়? আপকা বালতো পাকগ্যায়ে!” পদ্ম’রতো ভীরমী খাওয়ার দশা, জামাই বলে কি!

ইতিমধ্যে বাসন্তী জেনে গেছে, তার প্রাননাথ এসেছে। সে একছুটে এসে বাক্স পেটরা ঘরে তুলে নিয়ে গেলো। সন্ধ্যায়, কার্তিক আর বাসন্তী খেতে বসেছে, পদ্ম খাবার বেড়ে দিচ্ছেন। কার্তিক ভুল ভাল হিন্দী বলেই যাচ্ছে। এর মধ্যে সে শ্বাশুরীকে বলছে, আম্মীজী আপকো চেহারা বিলকুল আচ্ছা হ্যায়, লেকিন আপকো বাল পাক গ্যায়া।

রাতে, পদ্ম হারানকে বলছে, “ওগো, তোমার ছোট জামাই বলে আমার বাল পেকেছে! কতবাজে কথা! আমার চিন্তা, ও দেখলো কিভাবে!”

” হ্যা মা্গী, তোর বসা ভালোনা, আমিও দু’দিন দেখিচি” ধমকের সাথে উওর দেন হারান।

No comments: